প্লাস্টিক ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
পোস্ট সূচিপত্র ঃপ্লাস্টিক ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা বিস্তারিত জানুন
- প্লাস্টিকের ব্যবহারের সুবিধা
- প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক
- প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে আমাদের করণীয়
- পরিবেশকে বাঁচাতেই আমাদের করণীয়
প্লাস্টিকের ব্যবহারের সুবিধা ঃ
প্রক্রিয়াজাতকরণঃঅন্যান্য শিল্প থেকে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় প্লাস্টিক শিল্প। কারণ অন্যান্য পণ্য থেকে প্লাস্টিকের পণ্য দামে মানে ,উচ্চতা ও ব্যবহারের দিক দিয়ে ব্যাপকভাবে সুবিধা রয়েছে। আর প্লাস্টিকের পণ্য ব্যবহারের দিক দিয়ে পারফরমেন্সটাও ভালো। প্লাস্টিক পণ্য হালকা ও ব্যবহারের দিক দিয়ে রয়েছে নানান সুবিধা । প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের উৎপাদন খরচ খুবই কম। তার জন্য মানুষের মধ্যে এর চাহিদাটাও একটু বেশি।
ওজনে হালকা ঃআমাদের প্রতিদিন প্রয়োজনে-অপ প্রয়োজনে নানান পণ্য ব্যবহার করতে হয়। আর পণ্যগুলো ওজনটা অনেক বেশি,দাম টাও বেশি,টেকসই খুবই কম। কিন্তু প্লাস্টিক পণ্য ওজনে খুবই হালকা, দাম টাও মধ্যবিত্তদের হাতের নাগালে, আর এটি সহজে ভাঙ্গে না । (এর ঘনত্ব প্রায় ১.৯ আর ওজন ২.৪ গ্রাম, সেন্টিমিটার ৩.৫ এর মধ্যে, আর আলুমিনিয়াম ১/৫ এবং কংক্রিটের পরিমাণ ১/৮ থেকে থাকে )।
উচ্চশক্তি ঃএই প্লাস্টিকের শক্তি সিমেন্ট ও কংক্রিটের চেয়েও অনেক বেশি ঘনত্বের অনুপাত থেকে এবং প্লাস্টিকের শক্তি স্টিলের শক্তি কেউ ছাড়িয়ে যায়। প্লাস্টিক হচ্ছে অনেক বড় লাইট ওয়েট উচ্চ শক্তি উপাদান।
সুন্দরী নকশা তৈরি ঃপ্রতিদিন আমাদের প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে নানান পণ্য ব্যবহার করতে হয় যেমন ( চেয়ার, টেবিল , সুকেশ , ফার্নিচার ,দরজা , মোবাইল , টুপি জায়নামাজ , খাতা , আরো রয়েছে নানান বাসন-কোসন ইত্যাদি )। এসব এসব পণ্যের নকশা করতে প্রয়োজন প্রচুর সময় ও প্রচুর অর্থ। কিন্তু প্লাস্টিক এমন একটি পণ্য যেটা নকশা করতে খুব একটা বেশি অর্থ খরচ করতে হয় না। আমরা সুলভ মূল্যে অত্যন্ত সুন্দর নকশা পেয়ে থাকে।
প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক ঃ
প্লাস্টিক ব্যবহারে বর্তমানে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি পরিবেশ দূষিত হয়। দিন দিন
বেড়ে চলেছে প্লাস্টিক ব্যবহার। WHO এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে
২০০৬ সালে বাংলাদেশের পলিথিন এর ব্যবহার ছিল মাত্র ৪ কেজি। আর যা
২০২১ সালে মাথাপিছু পলিথিন এর ব্যবহার দাঁড়ায় ২৫ কেজি। আর যা আশা
করা যাই ২০৩১ সালের মধ্যে প্লাস্টিক ব্যবহারের মাথাপিছু হবে
৪০ কেজি।
আরো পড়ুন ঃ
চুলের যত্নে মেহেদি পাতার উপকারিতা
WHO এর প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ২০২২সালে বাংলাদেশ ১০ লাখ ৮৯ হাজার টন পলিথিন ব্যবহার করা হয়েছে। যা াপুনরায় ব্যবহারযোগ্য করা হয়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ।WHO সহায়ক টেকসই প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা জাতীয় পরিকল্পনা অনুযায়ী বলা হয়েছে বাংলাদেশ ২০২৭ সালের মধ্যে ৯৫ শতাংশ ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক কমিয়ে আনা হবে.২০২২ সালে প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশ করা হয় সেখানে বলা হয়েছে প্লাস্টিক দূষণের হটস্পট ঢাকা শহর।
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে ২০০৫ সালে প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ করা
হয় । ২০১৯ সালে বাংলাদেশের হাইকোর্ট প্রকৃতি ও দেশকে প্লাস্টিকের দূষণের
ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশের সমস্ত হোটেল -মোটেল থেকে
প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়।
আমরা প্রতিদিন যে প্লাস্টিক ব্যবহার করে থাকি যেমন, বিভিন্ন ধরনের ড্রিংসের বোতল , বিভিন্ন ধরনের চিপসের প্যাকেট , সেগুলো ব্যবহার করি আমরা রাস্তা ফেলে দেই। বর্ষার সময় সেই প্লাস্টিকের বোতল ও চিপসের প্যাকেট ড্রেন এর ভিতর প্রবেশ করে জলবোধতা সৃষ্টি করে। সেই পানি জমে থেকে পরিবেশকে দূষিত করে এবং মশা -মাসি ও বিভিন্ন রোগ বলাই বিস্তার করে।
এমনকি ড্রেন কে বন্ধ করে দিয়ে নালা ,খালা ,বিল ,নদী তে পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। প্লাস্টিক শুধু পানি সরবরাহ বন্ধ করে না। তার সাথে নদীর তলদেশ ও ভরাট করে দেয়। বুড়িগঙ্গা ও চট্টগ্রাম আশেপাশে নদীগুলোতে পলিথিন বা প্লাস্টিক এর স্তুপ হতে হতে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। যার ফলে আমাদের উর্বর পলিমাটি দীর্ঘদিনের জন্য আস্তে আস্তে অনুর্বর হয়ে পড়ছে।যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত হুমকিল।
একটাই পৃথিবী নামক গ্রহ। তাই জীবনেরই সমান পরিবেশ প্রকৃতির -গুরুত্ব। তাই আমরা সবাই ২০২৮ সালে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করে থাকে। প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করা এবারের মুখ্য বিষয়। প্লাস্টিক হল বিশ্ববাসীর সামনে অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ বর্তমান সময়ে।প্লাস্টিক অপরিহার্য অংশগুলোর একটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে।
আর প্লাস্টিকের ব্যবহার বাংলাদেশ সহ পুরো বিশ্বব্যাপী দিন দিন বেড়ে চলেছে।
প্লাস্টিক খুবই হালকা, টেকসই , এবং সহজলভ্য তার কারণে এর ব্যবহার দিন দিন বেড়ে
চলেছে। বর্তমান সময়ে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাংলাদেশের প্লাস্টিক দ্রব্য
দখল করে আছে। বাংলাদেশে পাই ৫ হাজার প্লাস্টিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান
রয়েছে। প্লাস্টিক খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ৩০ লাখ এর বেশি
মানুষ।
আরো পড়ুন ঃ পেটের গ্যাস কমানোর ঘরোয়া উপায়
WHO এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৫ ট্রিলিয়ন প্লাস্টিক পণ্য প্রতিবছর সাগরে ফেলা হয়। যার কারণে সাগরে মাছের তুলনায় প্লাস্টিকের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে ২০৫০ সালের মধ্যে।WHO এর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে প্লাস্টিক বোতল সাগরে ফেলা হয় প্রতি মিনিটে ১৫ লাখ বোতল।
প্লাস্টিক দূষণের সমাধানের আমাদের করণীয় ঃ
প্লাস্টিক আমাদের পরিবেশ দূষণের পেছনে অন্যতম বড় অবদান রাখে। আমরা সব সময় প্লাস্টিক ব্যবহার করছি ।আর পরিবেশকে দূষিত করছি। এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে দৈনন্দিন কাজে প্লাস্টিক দ্রব্য। মানুষ তার জন্য প্লাস্টিক পণ্য ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারেনা । আমার আমাদের দৈনন্দিন কাজে থেকে শুরু করে , শিশুদের মুখে দেওয়া তোদের বোতল সবকিছুই প্লাস্টিকের তৈরি । কিন্তু আমরা কখনোই ভাবি না যে প্লাস্টিক আমাদের পরিবেশের জন্য কতটা হুমকি স্বরূপ।
আসুন প্লাস্টিক থেকে কিভাবে দূরে থাকা যায় জেনে নেই ,
বেলুন ঃবেলুন বস্তুটি পচনশীল না। এগুলো খাদ্যের গুণাগু নষ্ট করে মাটির সাথে মিশে এবং প্রাণীদেহের বিভিন্ন ক্ষতি করে। বেলুন খুবই আকর্ষণীয় একটি বস্তু শিশুদের কাছে। অন্য কোন অনুষ্ঠান যেমন, ( বিবাহ বার্ষিকী ,জন্মদিন , বিয়ে , গায়ে হলুদ , আরো নানান অনুষ্ঠান ) বেলুন না হলে যেন চলেই না।
আরো পড়ুন ঃ চর্ম রোগের ঔষধ-চর্মরোগ ভালো করার ঘরোয়া উপায়
কিন্তু বেলুনের পরিবর্তে আমরা কাগজ ব্যবহার করতে পারি। কাগজ কিনে সেটাতে আমরা
নানান ডিজাইন দিতে পারি যেমন , ( ঘোড়া ,হাতি, বানর ,বাঘ ,ভাল্লুক , চিতা ,
সিংহ ,বিলাই , ছাগল ইত্যাদি )। সেটা আমাদের পরিবেশকেও রক্ষা করবে এবং ঘরের
সৌন্দর্যটা বৃদ্ধি করবে।।
পানির ও ড্রিংক এর বোতল ঃআমাদের প্রতিদিন বাইরে থেকে পানির বোতল ও ড্রিংক খেতে হয়। খাওয়া শেষে সেই প্লাস্টিকের বোতলটা আমরা রাস্তাতেই ফেলে রাখি। সেই পানির বোতল বিভিন্নভাবে খাল ,বিল ও নর্দমাতে গিয়ে পৌঁছায়। এবং সেই প্লাস্টিকের বোতলটা মাটি পানি ও পরিবেশকে দূষিত করেন। এর ফলে পরিবেশকে বাঁচাতে হলে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এর জন্য আমাদের সকলকে ডাস্টবিন ব্যবহার করতে হবে।
নদীতে ময়লা ফেলা ঃআমাদের বাড়িতে ব্যবহারের অযোগ্য প্রতিদিন নানা ময়লা জমে।সেগুলো আমরা খাল- বিল পুকুর ও নদীতে ইচ্ছে মত ময়লা ফেলি। আর আমাদের প্রত্যেককেই যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে থেকে বিরত থাকতে হবে।WHO এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমরা সমুদ্রের ময়লা আবর্জনা জন্য ফেলি তার কারণে সমুদ্রে বসবাসকারী বিপুল পরিমাণে মাছ এবং কচ্ছপ মারা যায় । যার জন্য শুধু আমরা মানুষ দায়ী।
ক্লাব ও কর্মসূচি ঃপরিবেশ বান্ধব শিক্ষা দিতে হবে স্কুলগুলোতে। যেখানে পরিবেশ রক্ষা জন্য ,মেলা , মিটিং এবং নানান কর্মসূচি করতে হবে । যার ফলে শিশুদের মধ্যে দায়িত্বশীলতা ,সচেতনতা ও যত্নবান হয়ে উঠবে। এবং ন এবং নানান ধরনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে নিজ নিজ এলাকায়। এবং প্রত্যেকটি বাড়িতে গিয়ে প্লাস্টিকের ব্যবহারে ক্ষতিকর দিকগুলো সবাইকে বোঝাতে হবে । যেন সবাই সচেতন হই।
প্লাস্টিক থেকে পরিবেশকে বাঁচাতেই আমাদের করণীয় ঃ
আমরা প্রতিদিনই প্রয়োজনে -অপ্রয়োজনেপ্লাস্টিক ব্যবহার করে থাকি। আমরা সবাই জানি
প্লাস্টিক আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য এবং পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর। এর জন্যই
আমাদের সকলকেই প্লাস্টিক এর ব্যবহার ধীরে ধীরে কমিয়ে দিতে হবে। আর
প্লাস্টিকের বোতলে পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। আমরা পরিত্যক্ত
প্লাস্টিক যেখানে সেখানে না ফেলে একটা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবো যাতে পরিবেশটা নষ্ট
না হয়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url