কাঁচা কলার খাবার উপকারিতা - কাঁচা কলার খাবার নিয়ম
আপনি যদি আধুনিক উপায়ে কিভাবে কলা চাষ করবেন সে বিষয় নিয়ে চিন্তিত তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য আপনি যদি এই পোস্টটি সম্পন্ন করেন তাহলে আধুনিক উপায়ে কলা চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
পোস্ট সূচিপত্র - কাঁচা কলার উপকারিতা -কাঁচা কলার পুষ্টিগুণ
- আধুনিক উপায়ে কলা চাষ
- কাঁচা কলা খাবার উপকারিতা
- কাঁচা কলার পুষ্টিগুণ
আধুনিক উপায়ে কলা চাষ -
বাংলাদেশের জন্য কলা একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফল যেটা সারা বছর পাওয়া যায়। আমরা কলা কে প্রাচীন ইতিহাসের কদলি বলে থাকি। আমাদের সকলের জন্য কলা গাছ, কলাপাতা ও কলার শিকল সবই উপকারী। শুধু খাদ্য নই কলাপাতা ও কলা গাছ। কল গাছ ও কলা পাতাতে রয়েছে হাজার ভেষজ গুণ। যেটা আমাদের শরীর থেকে রোগ নিরাময় করতে সাহায্য করে।কলার পুষ্টিগুণ রয়েছে অনেক। কলা একটু উপকারী খাদ্য যেটা পাকা ও কাঁচা দুই অবস্থাতে খাওয়া যায়।
আধুনিক উপায়ে কলা চাষের পদ্ধতি -
কলা চাষ - বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশের যেসব কলা চাষ করা হয় সেগুলো হলো আনাজি কলা, জিন কলা, চম্পা, সবরি, বিচি কলা ইত্যাদি।
মাটি - সকল জমিতে সব সময় রোদ থাকে এবং যে সকল জমিতে বৃষ্টির পানি জমে থাকে না সে সকল জমিতে কলা চাষের জন্য উপযুক্ত জমি। কলা চাষের জন্য সবচাইতে উত্তম মাটি হল দো - আঁশ মাটি। কলা চাষে উপযুক্ত করার জন্য জমিতে চাষ ও মই দিয়ে জমিকে সমতল আগাছা মুক্ত করে নিতে হয়।
আরো পড়ুন - জাম খাবার উপকারিতা ও জামের পুষ্টিগুণ
চারা রোপন - বাংলাদেশের সাধারণত ৩ সময়ে কলার চারা রোপন করা হয়। প্রথমটি হল আশ্বিন ও কার্তিক, দ্বিতীয় টি হল মাঘ ও ফাল্গুন, তৃতীয়টি হল বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ।
চারার দূরত্ব - এক লাইন থেকে আরেক লাইনে দূরত্ব হবে ৩ মিটার এবং ১ চারা থেকে আরেক চারা দূরত্ব হবে ৩ মিটার।
গর্ত তৈরি - চারা রোপনের আগে মাটিতে গর্ত করে রাখতে হবে। গর্তের আকার হবে ৬৫ সেন্টিমিটার চওরা ও ৬৫ সেন্টিমিটার গভীর। গর্ত তৈরি করার পর গর্তে গোবর ও সার আগে থেকে দিয়ে রাখতে হবে।
সার প্রয়োগ - এক বিঘা জমিতে যে পরিমাণ সার প্রয়োগ করতে হবে
- টিএসপি সার ৩২ কেজি
- ইউরিয়া সার ২৫ কেজি
- এমপি সার ২২ কেজি
- টিএসপি সার ২৭ কেজি
- ডি এ পি সার ২৬ কেজি
- পটাশ সার ২৪ কেজি
- ফসফেট সার ২২ কেজি
কলা চাষের পরিচর্যা - কলা গাছ রোপনের সময় ও কলা গাছ রোপনের এক সপ্তাহ পর পর কলাগাছে নিয়মিত পানি দিতে হবে। তাছাড়া বৈশাখ ও জৈষ্ঠ মাসের এই সময়ে ১২ - ১৫ দিন পর পর কলাগাছে পানি দিতে হবে। আষাঢ় মাস বা বর্ষার সময় কলাগাছে যেন পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং নালা করে দিতে হবে।
রোগ ও প্রতিকার - কলা গাছের প্রধান ও অন্যতম রোগ হচ্ছে বসন্ত,ভাইরাস, পানামা, সিগাটোকা, ও কালো দাগ। এইসব রোগের জন্য প্রথমত আক্রান্ত গাছ গোরা সহ উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। চারা হিসেবে আক্রান্ত গাছ ব্যবহার করা যাবে না। তাছাড়া গাছ উঠানোর আগে বিভিন্ন কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
আরো পড়ুন - ড্রাগন ফল খাবার উপকারিতা
পানামা রোগের ফলে কলা গাছে বসন্ত রোগের মত কালো কালো দাগ সৃষ্টি হতে পারে। এই দাগ দূর করতে কলা গাছে মোচা বের হওয়ার সময় ছিদ্র বিশিষ্ট পলিথিন দিয়ে পেচিয়ে রাখতে হবে। তাছাড়া অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করি কলা গাছের সমস্ত পোকা মেরে ফেলতে হবে।
ফসল সংগ্রহ - কলা গাছ রোপনের প্রায় ১০ থেকে ১২ মাসের মধ্যে কলা তোলার উত্তম সময়। কলার সংগ্রহের সময় একটি দিকে খেয়াল রাখতে হবে যেন কলাটা নষ্ট না হয়ে যায়। তাহলে সে কলাটা আর বাজারে বিক্রি করা যাবে না। এক বিঘা জমিতে সাধারণত ৫ থেকে ৬ টন কলা উৎপাদন করা হয়
কাঁচা কলা খাবার উপকারিতা -
হালকা কাশি - হালকা হালকা কাশির জন্য কাঁচা কলা একটি ওষুধের মত কাজ করে। একটা কাঁচা কলা নিয়ে হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে সেটা সুন্দরভাবে সেকে নিয়ে সেই কলা গরম করা পানিটা সকালে ঘুম থেকে উঠে ও রাতে ঘুমানোর আগে খেলে আশা করা যায় হালকা হালকা কাশি দূর হয়ে যাবে। এভাবে সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন খেতে হবে। এটা খেলে আশা করা যায় কোন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া লাগবে না বলে আমি মনে করি।
গলা ব্যথা - আপনার যদি গলা ব্যথা, গলায় ঘা, গলার স্বর ভেঙ্গে গেছে এমন সমস্যা সমাধানের জন্য কাঁচা কলা অনেক বড় ভূমিকা রাখে আপনার যদি এরকম সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে আপনি প্রতিদিন একটি করে কাঁচা কলা মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। এভাবে সপ্তাহে 5 থেকে 6 দিন খেলে আশা করা যায় এতে আপনার গলা ব্যথা দূর হয়ে যাবে।
আরো পড়ুন - বেদানা খাওয়ার উপকারিতা
কৃমি - আপনার যদি কৃমি হয়ে থাকে । তবে আপনি প্রতিদিন কাচা কলা ও কলা গাছের শিকড় খেতে পারেন।২ থেকে ৩ চা চামচ কলা গাছের শিকড়ের সাথে ২ থেকে ৩ চা চামচ মধু মিস করে খেলে আপনার পেট থেকে কৃমি সারা জীবনের জন্য দূর হয়ে যাবে। আপনি যদি এভাবে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খেতে পারেন তাহলে আশা করা যায় আপনার পেট থেকে সারা জীবনের জন্য দূর হয়ে যাবে।
চেহেরা উজ্জ্বল করতে - আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যাদের চেহারা অল্প বয়সে নষ্ট হয়ে যাই বা চেহারাতে একটা বয়স্ক ছাপ সৃষ্টি হয়। আর আপনার আপনার যদি চেহারা অল্প বয়সে নষ্ট হয়ে যাই তাহলে আপনি প্রতিদিন একটি করে কলা খেতে পারেন। কলা খেলে আপনার চেহারা কমল ও উজ্জ্বল হবে। কোন ক্রিম বা ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে হবে না।
ডায়রিয়া - অনেক সময় দেখা যায় আমাদের বিভিন্ন কারণে পেট খারাপ বা ডায়রিয়া হয়ে থাকে। এই ডায়রিয়া বা পেট খারাপ ভালো করতে কাঁচা কলার ভূমিকা অপরিসীম। আপনার যদি ডায়রিয়া তাহলে আপনি ২ থেকে ৩ টা কাঁচা কলা নিয়ে পানিতে গরম করে ভর্তা করে সে ভর্তা খেতে পারেন। এভাবে ভর্তা করে খেলে আপনার ডায়রিয়া খুব দ্রুত ভালো হয়ে যাবে।
প্রসবের পর - অনেক সময় দেখা যায় প্রসবের সময় মেয়েদের শরীর থেকে অনেক টা রক্ত বেরিয়ে যায়। আর এ রক্ত পূরণ করতে কাঁচা কলা অনেক বড় ভূমিকা রাখে।প্রসবের পর শরীরে শক্তি জগতে ও শরীর ঝরঝরে করতে কাঁচা কলা খেতে পারি। তাছাড়া কাঁচা কলার সিদ্ধ করে ভাতের সাথে মিশিয়ে ভর্তা করে খেতে পারেন। এতে আশা করা যায় হারানো শক্তি আর ফিরে চলে আসবে।
কাঁচা কলার পুষ্টিগুণ -
২৫০ গ্রাম কাঁচা কলা তে যে পরিমাণ পুষ্টি গুণ রয়েছে তা নিচে তুলে ধরা হলো -
- আশ রয়েছে ০.৬৪ গ্রাম
- খনিজ লবণ রয়েছে ০.৮৫ গ্রাম
- ফ্যাট রয়েছে ০.৫৭ গ্রাম
- আমিষ রয়েছে ৩.২৬ গ্রাম
- পানির রয়েছে ১৪৫ গ্রাম
- লৌহ রয়েছে ০.৬৭ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম রয়েছে ৩৫ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন এ রয়েছে ১৮০ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সি রয়েছে ৬৪ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন ডি রয়েছে ০.২৫ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি রয়েছে ০.৪৫ মিলিগ্রাম
- চর্বি রয়েছে ০.২৫ মিলিগ্রাম
- শর্করা রয়েছে ৬৪ মিলিগ্রাম
- প্রোটিন রয়েছে ২২ মিলিগ্রাম
- ক্যালরি রয়েছে ২৬০ কিলো ক্যালরি
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url